কিশোর বয়সে মায়ের আঁচল ছেড়ে বিদেশ যাত্রা, সে তো হৃদয় ভাঙার যন্ত্রণা। দুর প্রবাসের অচেনা নগরীতে কত শত মুখ, কত মানুষ। কিন্তু তাদের মাঝে খুঁজে পাওয়া যায় না প্রিয় মা, বাবা, ভাই-বোনের মুখ। কত বার যে ডুকরে ডুকরে কেঁদেছে রুহুল আমিন, শুধু একবার মা‘কে দেখবে বলে। বহুবার হয়তো ভাগ্যের কাছে হার মেনে নিয়ে ফিরতে গিয়েও বাড়ি ফেরা হয়নি তার। আমেরিকার নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য এভাবেই কেটে গেছে ২৪টি বছর।
পরিবারের সচ্ছলতা, বাবাকে দেয়া প্রতিশ্রুতি আর নিজের ভবিষ্যতের শক্ত ভিত্তির জন্য জীবনের স্বর্ণালী দিনগুলো কেটে গেছে তার সাত সমুদ্র তের নদীর ওপারে। যেখানে গ্রিন কার্ড পাওয়াই ছিল রুহুল আমিনের বড় চ্যালেঞ্জ। কত বার হয়তো সে মা‘কে মানিয়েছে এই বলে যে, আর তো কয়টা দিন মা, গ্রিন কার্ডটা হলেই চলে আসবো তোমার কাছে। রুহুল আমিনের এখন গ্রীণকার্ড হয়ে গেছে। সে এখন মার্কিন মুলুকের বাসিন্দা। তাই তো কত আনন্দ, কত খুশির খবর নিয়ে মায়ের কাছে ফিরতে চেয়েছিল রুহুল আমিন।
হ্যাঁ, রুহুল আমিন ফিরেছে! সে তার মায়ের কোলেই ফিরেছে। কিন্তু মাকে দেখার বহুদিনের সেই আকাঙ্ক্ষা, মায়ের মুখটা দু-হাতে ছুঁয়ে দেখার অনুভূতি আর ফিরে পাওয়া হলো না রুহুলের। কারণ সে এখন মায়ের হাতের ওপর গভীর ঘুমে বিভোর। যেই ঘুম ভেঙ্গে আর কোনো দিনই রুহুল জেগে উঠবে না। মাকে আর ডাকবে না মা বলে, মায়ের কোল ছেড়ে যাওয়া কিশোর রুহুল এখন মায়ের কাছে যেন হঠাৎ বেড়ে ওঠা রুহুল আমিন। নির্বাক মা অপেক্ষায়, রুহুল হয়তো ঘুম ভেঙ্গে ঠিকই জেগে উঠবে। কিন্তু মা‘কে এখন কে জানাবে, তার রুহুল এখন দুর আকাশের তাঁরাদের দলে।
কারণ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন আমেরিকা প্রবাসী রুহুল আমিন (৩৮)। নিহত রুহুল আমিন বিয়ানীবাজার উপজেলার কুড়ারবাজার ইউনিয়নের খশির নামনগর এলাকার আলিম উদ্দিনের বড় ছেলে। দীর্ঘ ২৪ বছর আমেরিকা থেকেছেন তিনি। আসবো আসবো করেও তার আসা হয়নি দেশে, দেখা হয়নি মায়ের মুখ। কিন্তু তিনি ফিরলেন, মায়ের কোলেই ফিরলেন। হাসি মাখা মুখে নয়, রক্তে ভিঁজে, দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া শরীর সমেত কাফনে মুড়ে। রুহুলের যেন ফিরেও ফেরা হলো না ঘরে।
জানা গেছে, আমেরিকার গ্রিন কার্ড পাওয়ার পর মাকে দেখতে এবং বিয়ে করার উদ্দেশ্যে দেশে ফিরছিলেন রুহুল আমিন। মঙ্গলবার রাতে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মাইক্রোবাসে বাড়ি যাওয়ার পথে পাথরবাহী ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই মারা যান রুহুল। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার শশইয়ে এ ঘটনা ঘটে।
ওই দুর্ঘটনায় রুহুলের বাবা ও ছোট ভাইসহ পাঁচজন আহত হয়েছেন। আহতরা হলেন- রুহুলের বাবা আলিম উদ্দিন, ছোট ভাই নুরুল আমিন ও ফখরুল আমিন, মামাতো ভাই এমরান আহমদ এবং মাইক্রোবাসচালক বাদশাহ মিয়া।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল বিশ্বরোড খাটিহাতা হাইওয়ে থানার এসআই গিয়াস উদ্দিন জানিয়েছেন, মাইক্রোবাসের চালক ক্লান্ত এবং ঘুমের ঘোরে থাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।
টাইমস/এসএন/এইচইউ